প্রতিদিন প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের সরকারি সা’দত কলেজে বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২৫ উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য র্যালি, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এবারের স্লোগান ছিল, “প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়”। বুধবার (২৫ জুন) কলেজ ক্যাম্পাসে র্যালি এবং কলেজ অডিটরিয়ামে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অত্র কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মনিরুজ্জামান মিয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোঃ আবদুল্যাহ তালুকদার (সম্পাদক, শিক্ষক পরিষদ)। স্বাগত বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোহাম্মদ কামরুজ্জামান চৌধুরী (সহযোগী অধ্যাপক, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ)। উক্ত অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর মোঃ শাহজাহান আলী (আহ্বায়ক, বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২৫ ও বিভাগীয় প্রধান উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ)। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং শিক্ষক মন্ডলী। এছাড়া উপস্থিত ছিল সরকারি সা’দত কলেজ ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীবৃন্দ, বিএনসিসি সদস্যবৃন্দ, রোভার স্কাউট সদস্যবৃন্দ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যের শুরুতেই সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, দিন দিন আমাদের পৃথিবীটা অনেক বেশি দূষিত হয়ে যাচ্ছে। শিল্প কারখানা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে পরিবেশ ততো বেশি দূষিত হচ্ছে। তাপমাত্রাও ততো বাড়ছে। একজন বিজ্ঞানীর মতে ২৬০০ সালে পৃথিবীর অবস্থা একটা আগুনের কুণ্ডুতে পরিণত হতে পারে। কার্বন শূন্য করার মূল লক্ষ্য হচ্ছে, পৃথিবীর তাপমাত্রা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা গেলে উক্ত আশঙ্কা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে বলে মনে হয়। এছাড়াও সুষ্ঠ বর্জ্য ব্যবস্থাপনাই পারে পরিবেশ দূষণ রোধ করতে। পরিবেশ দূষণ রোধে বেশি বেশি পরিবেশবান্ধব গাছ লাগানো জরুরি এবং আমরা যে যেখানে থাকি সেখান থেকেই আমাদের পরিবেশ সুন্দর রাখার কাজ করতে পারলে পরিবেশ বসবাস উপযোগী হবে।
বিশেষ অতিথি তার বক্তব্যে বলেন “পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি” আজকের এই বিশ্ব পরিবেশ দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো পরিবেশ দূষণ রোধ করা। পরিবেশ দূষণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হলো কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, তেজস্ক্রিয়তা এবং বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের বিস্তার। খেয়াল করলে দেখা যাবে করটিয়া সহ ঢাকার আশেপাশে বিভিন্ন নদী-নালা, খাল-বিলের পাশাপাশি বুড়িগঙ্গা নদী কোনভাবেই মাছের বসবাস উপযোগী নয়। এমনকি সাগরের পানিও দূষিত হচ্ছে জাহাজ থেকে নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হওয়ার ফলে। তেজস্ক্রিয় পদার্থ, কার্বন ডাই অক্সাইড নিরসনের ফলে সারা বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে উত্তরাঞ্চলে হিমালয়সহ অনেক জায়গায় বরফ গলে নদী হয়ে সাগরে চলে যাচ্ছে। যে কারণে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে উপকূলবর্তী দেশগুলোর অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। এসব বিষয় রোধে আমাদের সচেতন থাকতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে বনায়ন করতে হবে। কারণ পরিবেশ রক্ষার জন্য বৃক্ষরোপণ করলে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা কমে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। তাই আমাদের সকলের উচিত অন্তত একটি করে হলেও গাছ লাগানো। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিশ্বকে বসবাসযোগী করে তোলা যায়।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জনাব শামীম আল মামুন তার বক্তব্যের শুরুতে বলেন, প্রতিদিনই কোনো না কোনো দিবস পালিত হয়। তার মধ্যে কার্যকরী একটি দিবস হল “বিশ্ব পরিবেশ দিবস”। একটি জীবের পারস্পরিক অবস্থানকেই পরিবেশ বলা হয়। প্রতিনিয়ত নানাভাবে পরিবেশ বিপর্যস্ত হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি বিশেষ আহবান জানিয়ে বলেন তোমরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। ব্যক্তি পর্যায়ে নিজের পরিবেশের দিকে খেয়াল রাখবে, পারিবারিকভাবে বা সামাজিকভাবে, সর্বোপরি সা’দত কলেজের পরিবেশকে সমুন্নত রাখার চেষ্টা করবে।
পরিশেষে আজকের অনুষ্ঠানের সভাপতি তার বক্তব্য বলেন, অপরিকল্পিত এ নগরে পানি দূষণ হচ্ছে, বায়ু দূষণ হচ্ছে। এই বায়ু দূষণের কারণে ঢাকা শহর আজকে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ পলিথিনের ব্যবহার। এই পলিথিনের বিকল্প ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ রোধ করা সম্ভব। এছাড়াও যার যার অবস্থান থেকে বদলাতে না পারলে এবং সচেতনতা তৈরি করতে না পারলে পরিবেশ দূষণ রোধ করা সম্ভব হবে না। তিনি সর্বশেষে ছাত্রদলকে কিছুদিন আগে তাদের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।